গল্প শুনতে যে মানুষ ভালোবাসে, তার বোধহয় গল্প বলার লোকও ঠিক জুটে যায়। পরের দিন সুমনকাকু আসতেই তাকে বললাম, তোমার বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা বল। স্বভাবসিদ্ধ হাসিমুখ নিয়ে শুরু করল সুমন কাকু, “বাবাকে ওরা গুলি করে মেরেছিল। আমি আর দাদা পালিয়েছিলাম, আমাদেরও ধরেছিল, কিন্তু পরে ছেড়ে দেয়। তখনই পালিয়ে আসি এখানে।” যে লোকটা এমনি সময় বড্ড বেশি কথা বলে, বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা বলার সময় দেখলাম অল্প কথায় কাজ সারল – আমি আর ঘাঁটালাম না। সত্যি বলতে, জিজ্ঞেস করার সাহস হল না। সুমন কাকু কিন্তু তখনও হাসছেন, বাবার মর্মান্তিক মৃত্যুর কথা বলছেন – কিন্তু তাতে কোনো দুঃখ-ক্ষোভ কিছুই নেই – কেমন যেন নির্লিপ্ত। এটাই দেশভাগের দান, এই মানুষগুলোর চোখের জল কেড়ে নিয়েছে ৪৭, ৭১ –এই বছরগুলো। এরা আর কিছুতেই আশ্চর্য হয় না। ... ...
আমার ছোটবেলা ইতিহাসের এক ক্রান্তিকাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের চূড়ান্ত অবস্থা, ৫০-এর দুর্ভিক্ষ(খ্রীষ্টাব্দ ধরলে ১৯৪৩), ভারতের স্বাধীনতা, নেতাজীর যুদ্ধ প্রচেষ্টা, বোম্বাই-এর রাজকীয় নৌসেনার বিদ্রোহ, দেশভাগ(বাংলা ও পাঞ্জাব), পাঞ্জাবের-তত-নয় কিন্তু বাংলার অকথ্য দুর্দশার শুরু – যা এখনো এই ৭০-৭১ বছর পরেও চলছে। এতে বাংলার সাধারণ মানুষের কিছু ভুল থাকলেও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ভুল, স্বার্থপরতা, চিন্তার দৈন্য, দলাদলিও কম দায়ী নয়। তাই ভাবলাম, ওই সময়ে আমাদের বাড়ির, পাড়ার, গ্রামের পরিপ্রেক্ষিতে যতটুকু লেখা সম্ভব, চেষ্টা করব। মনে রাখতে হবে যে এই লেখা ইতিহাস লেখা হয়। বরং কৈশোরে পা দেওয়া আট বছরের ছেলে যা দেখেছিল ও নিজের মত বুঝেছিল, তার বর্ণনা। তবে এটাও ঠিক বয়স বাড়লে বুদ্ধি সামান্য পেকেছে, আর তাই আগের দেখাগুলি কখনো কখনো অন্যরকম মনে হয়েছে। তাই একটু “ইধার উধার” হলেও আশ্চর্যের কিছু নেই। ... ...
...রোহিঙ্গারা কিন্তু আরাকানের আদিম জনগোষ্ঠী নয়। খ্রিষ্টপূর্ব ২৬৬৬ অব্দ থেকে মারু ও কামরাজগজি বংশ স্বাধীনভাবে আরাকান শাসন করে। ১৪৬ বা ১৫১ খ্রিষ্টাব্দের দিকে মগধ থেকে আগত চন্দ্র-সূর্য নামক এক সামন্ত সৈন্যবাহিনী চট্টগ্রাম ও আরাকানে বসবাসকারী আদিম জাতির সঙ্গে যুদ্ধে জয়লাভ করে সেখানে নতুন রাজ্যের গোড়া পত্তন করে। মগধ থেকে আগত হিন্দু ও বৌদ্ধ সেনারা নতুন রাজ্যের আদিম অধিবাসীদের আর্য ধর্ম-দর্শন-সংস্কৃতি ও ভাষালিপিতে শিক্ষিত করে তোলে। কালক্রমে চট্টগ্রামে হিন্দু ধর্ম-সংস্কৃতি এবং আরাকানে বৌদ্ধধর্ম সংস্কৃতির উৎপত্তি হয়। ... ...
গাউছিয়ার সোনার দোকানগুলো থেকে চান্দা তুলতে গিয়ে ধরা পড়েছিল সুরা গুণ্ডা। তা প্রায় সাত বছর আগের ঘটনা। মহামান্য আদালত সুরার বিচার করে আজ যাবজ্জীবন ঘোষণা করেছে। সুরা কেবল চান্দাবাজ নয়। পুরানো রেকর্ডগুলো ঘেঁটে দেখা গেছে সুরা এক দুর্ধর্ষ বোমাবাজ এবং সাংঘাতিক খুনি। দেশের শীর্ষস্থানীয় এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে বছর কয়েক আগে যে বোমাবাজি হয়েছিল এবং তাতে যে দুজন লোক মারা গেছে তার নেতৃত্ব দিয়েছিল সন্ত্রাসী সুরা। সুরা গুণ্ডা পুরো নাম কী ? টেবিলের ছড়ানো ছিটানো কাগজে নাম খুঁজে পায় কুরাণ। রইসউদ্দিন সোহরাওয়ার্দী। ক্লাশ এইট পাশ। এরপর ঝরে গেছে। সুরার নীচে তিন ভাই, দুভাই দোকানপাট ব্যবসা করে। ছোট ভাইটা ইঞ্জিনীয়ার। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসি। ভাইটা কাঁদে । দেশে আসতে চায় । ... ...
স্মরণ করা ভাল. বাংলাদেশে তথাকথিত ‘ক্রসফায়ার‘ বা ‘বন্দুকযুদ্ধ‘ বা ‘এনকাউন্টার‘ এর ইতিহাস খুব নতুন নয়। বলা যায়, স্বাধীনতার পর পরই এটি এ দেশে চালু হয়। ওপারে নকশাল নিধনের নামে এটি চালু করে ইন্দিরা গান্ধি সরকার। একই সময় এপারেও নকশাল বা সর্বহারা নিধনে ব্যবহৃত হয় ‘ক্রসফায়ার‘। আর সম্ভবত এ দেশে প্রথম ‘ক্রসফায়ারের‘ শিকার হন– পূর্ববাংলা সর্বহারা পার্টির প্রধান সিরাজ সিকদার। আলোচিত এই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, কোথায় আজ সিরাজ সিকদার? অর্থাৎ ‘ক্রসফায়ারের‘ অমোঘ শক্তিটিকে বৈধতা দিতে চেষ্টা করেছিলেন তিনি। ... ...
শত শত বছরের নির্যাতন-নিপীড়নের কারণে তাদের মধ্যে এসব স্বভাব প্রবিষ্ট হয়েছে। মিয়ানমার সরকারের কর্তব্য ছিল তাদেরকে পূর্ণ নাগরিক অধিকার দিয়ে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিসহ জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখায় পারদশী করে গড়ে তোলা। কিন্তু ঐতিহাসিক বিদ্বেষবশত তারা তা করেনি। ফলে একটা পর্যায়ে এসে এই ‘একটা অংশ’ রোহিঙ্গা তাদের জন্য বোঝা বা জঞ্জাল হয়ে দাঁড়ায়। এই অংশের দায়ভার পড়ে যায় গোটা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর। এই ‘জঞ্জাল’ সাফ করতে তারা শুরু করে গণহত্যা। এটা তাদের ঐতিহাসিক ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতার কালিমা কোনোদিন তারা মুছতে পারবে না। ... ...
সেই কালো সময়ের উপরে লজ্জা লিখে লজ্জা পেয়ে দেশ ছাড়তে হয়ে ছিল তসলিমা নাসরিনকে। সেখানেও এমন এক পরিবারের কথা বলা হয়েছিল যারা শত বাধা পেরিয়েও দেশ ত্যাগ করে না। বাড়ির প্রধান একজন ভাষা সৈনিক এবং মুক্তিযোদ্ধাও। নিজের মেয়েকে যখন ধর্ষণ হতে দেখে তখন তাদের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। দেশ কাকে বলে তা নিয়ে জীবনের সবচেয়ে কঠিন প্রশ্নের সামনে দাঁড়ায় তারা। আমরা ভদ্রলোক মানুষ, আমরা এই সব নষ্ট কথা আমরা আমাদের সাহিত্যে মেনে নিতে পারি না। লজ্জা আসলে কার এই রকম একটা কঠিন প্রশ্ন সহ্য করা আমাদের দেশের মানুষের পক্ষে সম্ভব না। লজ্জা যখন বলে - “ধার্মিকেরা কি কখনও পারে বিধর্মীর সম্পদ লুট করে নিজের ধর্ম রক্ষা করতে? এতো আসলে ধার্মিকের কাজ নয়। এ হচ্ছে গুণ্ডা বদমাশের কাজ।” তখন সম্ভবত কোন উত্তর থাকে না জিহাদি জুলুসে জ্বলতে থাকা আমার ভাইয়েদের কাছে। আর তাই দেশ থেকে বাহিরে তসলিমা। ... ...
এসব ইশকুলের অধ্যক্ষা মাননীয়রা ছাত্রীদের বয়স, স্বাভাবিক অনায়বোধ, সহজাত অভিমান না বুঝে অমানবিক এবং বিকৃত মানসিকতার শিক্ষকদের চরমতাকে বিবেচনা করে অভিভাবকসহ ছাত্রীদের হরহামেশ অপমান করে থাকে। এদের না আছে আত্মমর্যাদাবোধ, না আছে অন্যদের মানব মর্যাদাবধের প্রতি বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা। ছোটবড়, ছেলেমেয়ে, ধনী নির্ধনের মানবমর্যাদা বোধে আঘাত করা যে অপরাধ— এই শিক্ষা, শিষ্ঠাচার, প্রয়োজন এবং ভব্যতা সভ্যতা তাদের নেই। এসবের ধারও তারা ধরে না। কেননা একজন অরিত্রী মরে গেলে আরো দশজন অরত্রী অই সিটে ভর্তি হওয়ার জন্যে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সাথে আছে তাদের বাবামায়েরা। অত্যন্ত দ্রুততার সাথে শিক্ষামন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপে এই প্রথম এ ইশকুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। কিন্তু অরিত্রী কি ফিরবে ? ওর বাবামা কি ফিরে পাবে কাঠগোলাপ কানে গোঁজা হাসিখুশি প্রাণোচ্ছল মেয়েটিকে ? ... ...
জনজাতিদের অবস্থাও যে খুব ভালো তা নয়। এরাও অতিদরিদ্র। ইতিহাসের দীর্ঘ পর্যায় জুড়ে এরা যেমন বাংলাদেশে, উত্তরবাংলাতে তেমনি অসমে বা পূর্বোত্তরেও নানা ভাবে বঞ্চিত। কিন্তু এখানে ‘কিন্তু’ আছে। এখানে হাজার রকমের জনজাতি বাস করেন। এদেরই মধ্যে আপাত সংখ্যাতেবেশি যারা তাদের সঙ্গে আপোস করে শাসনের সহযোগী করে নেবার চাল চিরদিনই চালিয়ে গেছে ভারতীয় বা স্থানীয় বর্ণহিন্দু শাসক শ্রেণি। তাই ইতিমধ্যে গড়েউঠা বহু জনজাতীয় রাজ্যেই ছোট জনজাতীয়দের দাবিয়ে রাখার কাজ বড়ো জনজাতীয়রাই করেন। যেমন কোচেদের জনজাতি বলে কোনো স্বীকৃতি নেই। এই দাবী জানালে বডোরাই এর বিরোধিতা করেন। বডোদের স্বশাসন দিয়ে তাদের শাসনের সহযোগী করে ফেলা হয়েছে। যেমন গোর্খাল্যাণ্ডে গোর্খাদের সহযোগী করে লেপচা ভুটিয়াদের দাবিয়ে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ সমস্ত জনজাতীয় এবং সংখ্যালঘু ঐক্য যাতে না গড়ে উঠে এটা ভারতীয় শাসক শ্রেণি সুকৌশলে সুনিশ্চিত করে। বাঙালি-বিহারি-মারাঠি-গুজরাটি-অসমিয়া বর্ণহিন্দু শ্রেণিটি এই সুকৌশল খুবপছন্দ করেন। গোটা পূর্বোত্তরে প্রায় সমস্ত জাতি জনজাতিদের উগ্রপন্থী গোষ্ঠী ছিল বা আছে। ব্যতিক্রম কেবল বাঙালি হিন্দু-মুসলমান। কিন্তু মুসলমানের বিরুদ্ধে টানা প্রচার আছে এরা আই এস আই-এর হয়ে কাজ করে, উগ্রপন্থীদের মদত দেয় ইত্যাদি। এগুলো মিথ্যাচারীদের প্রচার মাত্র। মাঝে মধ্যে গোয়েন্দা সংস্থাও এই সব প্রচারে তথ্য যোগায়। কিন্তু আজ অব্দি এদের বডো ডিমাছা মণিপুরি নাগা উগ্রপন্থীদের মতো সংগঠিত রূপে দেখা যায় নি। গেলে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে অন্য অনেক সংগঠনকে যখন ভারত সরকার আলোচনার টেবিলে নিয়ে এলো তাদেরও আনতে পারত। আর পারে নি বলে বাংলাদশ সরকারের বিরুদ্ধে ভারত সরকার কোনো অভিযোগ জানিয়েছে বলেও জানা যায় নি। অথচ ওদিকে ওদেশের সঙ্গে ঘনঘনই তো ভারত এবং অসম সরকারের কথা হচ্ছে। মুসলমানেরা যাদের থেকে মার খান তাদের কেন মদত দিতে যাবেন? কিন্তু কেবল বিজেপি নয়, বহু বামেরাও এই প্রচারে সিদ্ধহস্ত। প্রচার মাধ্যমের কথা তো বলেই লাভ নেই। অসমেআলফা এন ডি এফ বি- যখন গোলাগুলি ইত্যাদি করত তখন বহু হিন্দু বাঙালি 'ভদ্রলোক'ও বলে বেড়াতো এগুলো মুসলমানের কাজ। ... ...
চাপাতিধারীদের অতর্কিত হামলা আতঙ্কের যে সমাজে আমাদের বসবাস, তাতে নবতর সংযোজন এই ব্লগার খুন। যে গভীর পাপ আমাদের মানহীন শিক্ষাব্যবস্থায়, আমলাতন্ত্রের দাপটে, সংস্কৃতি চর্চায়, সামাজিক সংগঠনের ভূমিকাহীনতায়, দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষকতায়য় এত বছর ধরে চর্চা করে আসা হয়েছে, তার ফলাফল হাতেহাতে পাওয়া যাচ্ছে। বিজ্ঞান লেখকদের আড্ডা কি আর হবে এই দেশে? আইনস্টাইনের জন্মদিন পরের বছর কি পালন করা যাবে? শিশু-কিশোরদের মা বাবারা পাঠাবেন তো সাংস্কৃতিক আয়োজনে? সবশেষ ওয়াশিকুর রহমান বাবুর হত্যাকাণ্ড (৩০ মার্চ) এই ভীতির সংস্কৃতিকে আরও পাকাপোক্ত করার শয়তানি আযোজন। আমরা জানি যারা আসছে, সেই নতুন প্রজন্মের জন্যই আমাদের লড়ে যেতে হবে। সহিষ্ণু-মানবিক একটা সমাজ নির্মাণের জন্য প্রাণপণ যুদ্ধ চলবে। ... ...
এরশাদের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলেছিল ছাত্র সংগঠনগুলোই। তারা নানা মত ও পথের সংগঠনগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলেছিল। আবার জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আলাদা থেকেও যুগপৎ আন্দোলন করেছে। সে আন্দোলন সফল হয়েছে। এরশাদ পড়ে গেছে। এই অভিজ্ঞতা মনে রেখে ছাত্রদের সমস্যা নিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোকেই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা। তারা আড়েঠারে বলার চেষ্টা করছে, এইসব আন্দোলনে ছাত্র সংগঠনগুলো যোগ দিলে সরকার মাইন্ড করতে পারে। ষড়যন্ত্র তত্ত্ব খুঁজতে পারে। খুঁজুক। সরকারের পারমিশন নিয়ে সরকারের ডিজাইন অনুসারে আন্দোলনের অর্থ নেই। যারা যেকাজ, তার সেই কাজই করতে হবে। ফলে ছাত্র সংগঠনগুলো গা ঝাড়া দিয়ে উঠে পড়ো। নাকে তেল দিয়ে ঘুমানোর দরকার নেই। ... ...
আমি জানি না রেল কিম্বা সড়ক যে পথেই হোক শিলচর যাবার মতো সুন্দর পথ অসমে আর দ্বিতীয়টি আছে কিনা। আমি জানি না, অসমের আর কোথাও দয়াং কিম্বা জাটিঙ্গার মতো সবুজ, স্বচ্ছ নদী রয়েছে কিনা। আমি জানি না ভুবন পাহাড়ের মতো বিশাল রোমাঞ্চকর গুহা অসমে আর রয়েছে কিনা। বাকি সব পাহাড়, অরণ্য, ইতিহাসে ধন্য রাজনীতি, সংস্কৃতি কিম্বা ধর্মের কেন্দ্রগুলোর কথা না হয় উল্লেখ করলামই না। সে গুলো নিয়ে অন্য কখনো, অন্য কোথাও লিখব না হয়। আপাতত দাঁড়ানো যাক। ... ...
তো, আমারো কি এখন থেকে পরিবারের কথা মেনে সাবধান হওয়া উচিৎ? আমাকে কতল কাল কখন, কোথায় হবে? ডিউটি সেরে বাড়ি ফেরার সময় রাতের বেলা গলির মুখে কি ঘাপটি মেরে থাকবে কোনো মৌলবাদের নাতি? নাকি সকাল, সকালই নূরানী লেবাসের চাপাতিতন্ত্র বাসার সামনে ঝাপিয়েঁ পড়বে আমার ওপর? অথবা তারা আমার শোবার ঘরেই সদলবলে ঢুকে কুপিয়ে জিহাদ কায়েম করে গেল, এমনো তো হতে পারে? তারা আমার গলা কাটার আগে আমি কি তাদের মুখগুলো একনজর দেখার সময় পাবো? আর অনিবার্য প্রশ্ন এই, তখন কি হবে আমার অনুভূতি? ... ...
শাহবাগ জনতার সেই চেতনা, যে-চেতনা অনুমান করেছিলো জামায়াতের সাথে আওয়ামী লীগের কোন আঁতাত তৈরি হয়েছে। ট্রাইবুন্যাল-রূপী প্রহসনের নাটকে জনগণের দাবীর যে অপমান ঘটেছে শাহাবাগ তারই বহিঃপ্রকাশ। শাহবাগ আওয়ামী লীগ সৃষ্টি করেনি, কিন্তু শাহবাগে আওয়ামী লীগ একটা নেতৃত্বকে চাপিয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রতি বাকিদেরও সন্দ্বিগ্ধতার কারণে এরাও আবার একক নেতৃত্ব হতে পারেনি, কিছুটা হলেও যৌথ নেতৃত্বের বিকাশ ঘটেছিলো। বাকিরা যেহেতু সংগঠিত ছিলো না, তাই চাপিয়ে দেয়া নেতৃত্বের অগণতান্ত্রিকতা আর অস্বচ্ছতাও যথাসময়ে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। নীতিনির্ধারণী সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তও বদলে ফেলার মত গুরুতর ঘটনা শাহবাগে ঘটেছে। আবার, নেতৃত্বের যে কোন আপোষের ইঙ্গিত পাওয়া মাত্র সাধারণ জনতা ও কর্মীরা যেভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন, তাও নেতৃত্বের ভূমিকাকে বহুভাবে প্রভাবিত করেছে। ... ...
বাংলাদেশে নারীদের পথ খুব একটা সোজা না। নারী কে প্রতি পদে পদে প্রমাণ করে তারপর তার ন্যায্য হিস্যা বুঝে নিতে হয়। একজন নারী এগিয়ে যাবে আর তার সামনে কোন প্রতিবন্ধকতা আসবে না এমন তো শুধু বাংলাদেশে না, পুরো দুনিয়া জুড়েই হয় না। কম আর বেশি, নারীর অবস্থা করুণ। যেখানে সোজা রাস্তায় হেঁটে গেলে কথা শুনতে হয় সেখানে একজন নারী খেলবে ক্রিকেট? এশিয়া কাপ জেতার পরে এখনো অকল্পনীয় মনে হয় ব্যাপারটাকে। যারা ওই সব প্রবল বাঁধা অতিক্রম করে এগিয়ে গেছে তারা জয়ী হবে না তো কে হবে? ... ...
আর এই "বেআইনী বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ" এর মিথকথা তৈরী হওয়ার আগের থেকেই শুরু হয়েছিলো আরেকটি শয়তানী গল্প - সেটি হচ্ছে "বহিরাগতদের" চাপে বিলীয়মান 'স্থানীয়' মানুষদের কথা। এর জন্য মুসলমান অনুপ্রবেশকারীরা নয়, অন্য প্রদেশের হিন্দু যারা অসমে বসবাস শুরু করেছিলেন তারাই ছিলেন সেই আক্রমণের শিকার। না, জমির দখল নিয়ে সেই আন্দোলন ছিল না। সেটি দাঁড়িয়ে ছিল যে ভুল ভাবনার উপর সেটি হচ্ছে এই বাঙালি মধ্যবিত্তদের চাপে অহমিয়ারা তাঁদের জাতি পরিচয় ভুলে যাচ্ছেন। তাঁরা সরকারি চাকরিতে সুযোগ পাচ্ছেন না এবং স্থানীয় লোকেদের জন্য যে সুযোগ বা উপকার ছিলো সেগুলিও তাঁরা ভোগ করতে পারছেন না। আর এর ফলে ১৯৬০ সালে যা বঙাল খেদা আন্দোলন হয় তা শুধু শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বানানো কাহানীর ফল। ... ...
না, আমার, আমাদের, মানে অফিসিয়ালি 'আসাম'এর বাঙালিদের, ব্যাঙ্গালোরে আপাতত বিপদ নেই। আমরা 'মিড্ল্ ক্লাস', আমরা টিঁকে যাবো। আমরা নিরাপদে বসে বড় বড় জাতীয় সংহতির বুলিও দেবো। ফ্ল্যাট্ করবো বেঙ্গালোর নইলে কলকাতায়। ...কিন্তু যারা তা নয়, যারা এই দেশের ৯৯ ভাগ, যারা অশিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত তারা বাঁচবে কীভাবে? আজ না হোক কাল টিঁকে থাকার জন্য হয় তাদের বলতে হবে 'আম্গো বাসা কইলকাত্তা' ... আর নাহলে আসামে থাকলে, মুখে কিংবা কায়দায় 'আম্গো ভাহা অহইম্মা' বলে, ভূপেন হাজারিকাকে রবীন্দ্রনাথের চেয়েও বড় বলে সালাম ঠুকে 'অহইম্মা' হয়ে। ... ...
বাবা একদিন মরে পরে রইলেন চেয়ার মধ্যে। যে কাঠের চেয়ারটায় রোজ বসে থাকতেন বারান্দা, একদিন দেখা গেলো মাথাটা হেলে আছে চেয়ারের কাধে, মুখ দিয়ে ফেনা গড়াচ্ছে…। খুব বড় আয়োজন করে বাবার কুলখানি করলেন বড় ভাই। আমাদের ডালডা আর তেলের কারখানাটা বড় ভাইই চালান। ভাবী আমাদের এখানে থাকতে চান না বলে উত্তরায় ফ্ল্যাট কিনে ভাই-ভাবী সেখানেই থাকেন। এই বাড়িতে এখন আমি একা। পুরো একটা বাড়িতে একা থাকতে আমার একটুও একা লাগে না। কেন লাগে না জানি না। স্বপন যে ঘরটাতে ফাঁস দিয়েছিল সেঘরটা তালা দেয়া থাকে। মাঝে মাঝে খুলে ভেতরে ঢুকি। চেষ্টা করি স্বপনের কোন অস্তিত্ব অনুভব করতে। আজ ২২ বছর স্বপন নেই! মণীশ জ্যাঠার যেমন বয়স আটকে আছে মহাকালের ফ্রেমে, স্বপনও সদ্য যৌবনের চেহারা নিয়ে এ্যালবামে আটকে আছে। কি অদ্ভূত, মণীশ জ্যাঠা এ বাড়ির মায়া আজো কাটাতে পারলেন না কিন্তু স্বপনকে কতদিন প্রত্যাশা করেছি শুধু একবার দেখবো…। কিন্তু স্বপন যে দূর কোন দেশের অধিবাসী। স্বপন চলে গিয়ে আর ফিরে আসেনি…। ... ...
এই রকম একটা আন্দোলন হওয়ারই ছিল। ঢাকার রাস্তা এক মরণ ফাঁদ সবার জন্য। ঢাকার অবস্থা ভয়াবহ।সিটি বাস গুলার আচরণ গুলার ছবি দিয়ে হলিউডের সিনেমা বানানো যাবে অনায়াসে। রেডিসনের সামনে তবু অনেক কম হয়। বনানী, ফার্মগেট, আসাদগেট শাহবাগ এলাকার ছবি তো রীতিমত হরর ফিল্ম কেউ হার মানায় সময় সময়। ঢাকার বাহিরের চিত্রও প্রায় একই রকম। সমস্যা হচ্ছে ঢাকার বাহিরের খোঁজ মানুষ একটু কমই রাখে। ঢাকা কেন্দ্রিক বাংলাদেশ জানে না দৈনিক কি পরিমাণ মানুষ দুর্ঘটনার শিকার হয়। বড় কোন দুর্ঘটনা না হলে পত্রিকার চারের পাতার আট নাম্বার কলামের নিচের দিকে থাকে এই সব সংবাদ। আমরা খোঁজও নিয়ে দেখি না, দেখার প্রয়োজনও বোধ করি না। কোথাও কোন টু শব্দ হয় না। যার কারনে শ্রমিক নেতা তেলতেলে হাঁসি হাঁসার সাহস পায়। দিনের পর দিন এই চলে আসছিল।এবার নতুন যোগ হল ভারতে প্রতিবাদ হয়েছে কিনা তা খোঁজ নিয়ে দেখার!! ... ...
মিঞাদের আরো নাম আছে। পুরাতন অসমিয়াদের কাছে তারা 'ময়মনসিংগিয়া'। সম্বোধনটি তাচ্ছিল্যমিশ্রিত। তবে এর খানিক ইতিহাসভিত্তি আছে। বৃটিশদের ভূমিরাজস্বের খাঁই ছিল ভরপেট। আসামদেশ দখল করার পর সায়েবদের খেয়াল হল এখানে জমির অভাব নেই। অথচ জনসংখ্যা অপ্রতুল। রাজস্ব বাড়ানোর জন্য জমি চাষে লাগানো দরকার। ব্রহ্মপুত্রের চর, পলিজমি পাট চাষের জন্য উপযুক্ত। কিন্তু চাষ করবেটা কে? বাংলার জনঘনত্ব সেই সময় আসামের কয়েকগুণ। অতএব প্রশাসন পূর্ববঙ্গ থেকে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় চাষিদের আনার উদ্যোগ নিল। এদের প্রায় সবাই মুসলমান ছিলেন, এবং বেশিরভাগ ময়মনসিংহের। কালে পূর্ববঙ্গের মুসলমান মাইগ্রান্ট চাষি মানেই ময়মনসিংগিয়া নাম হল। বর্তমানে তাদের 'ন-অসমিয়া' নাম দিয়ে অসমিয়া সমাজে একাত্ম করার চেষ্টা চলছে। সরকারি প্রচেষ্টা আর কী। মধ্যবিত্ত মানসের অবস্থা বাসের মত। পাট চাষ নিয়ে এই লেখা,মাঝখানে শিবের গীত এসে গেছে। পরশু, ১০ অক্টোবর বেসিমারি গঞ্জে পুলিশের গুলিতে ৪ জন পাট চাষি মারা গেছেন, অনেকে আহত। দাবি ছিল পাটের জন্য ন্যায্য দামের, পাটের স্তুপ বানিয়ে ৫২ নং সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পুলিশের মাথায় ঢিল পড়লে পুলিশ কয়েন, মানে গুলি, ছোঁড়ে। ... ...